চাকরিচ্যুত করা হয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কনস্টেবল শওকত হোসেনকে, যিনি মানবিক পুলিশ হিসেবে দেশে ব্যাপক আলোচিত ও প্রশংসিত হয়েছিলেন। গত ১৬ এপ্রিল তার চাকরিচ্যুতির আদেশে স্বাক্ষর করেন সিএমপির বন্দর বিভাগের উপ-কমিশনার শাকিলা সোলতানা। আদেশের কপি পাঠানো হয়েছে সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়ের দফতরে। আদেশে বলা হয়েছে, ‘৭১ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়া অভিযুক্ত (শওকত হোসেন) শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত সমস্যা থাকায় এবং বেওয়ারিশ মানুষ নিয়ে মানবিক কার্যক্রমে ব্যস্ত থাকায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি করা তার পক্ষে সম্ভব নয়, এমন বক্তব্য লিখিতভাবে কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
এদিকে আজ শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) চাকরিচ্যুতির বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে লাইভে এসে কথা বলেছেন শওকত হোসেন। তিনি বলেন, আমি স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে অব্যহতির আবেদন করেছিলাম। শওকত হোসেন বলেন, কুমিল্লায় পুলিশ সুপার মহোদয়ের কার্যালয়ে গিয়েও অব্যহতির আবেদন করি। এটির প্রক্রিয়া শেষ হতে অনেক সময় লাগে। কিছু সময় দেরি হয়ে গেছে। ওই সময়টাতেই আসলে অব্যহতির নোটিশটা চলে আসে। আসলে দেশদ্রোহী কোনো কিছুই আমি করিনি। তিনি আরো বলেন, গতানুগতিক নিয়মেই আমি দরখাস্ত করেছি। এটি নিয়ে ভিন্ন ধরনের কথা বলার সুযোগ নেই। আমার অব্যহতির বিষয়টা গরহাজিরের কারণেই তারা করেছে।
তিনি বলেন, আমার ব্যক্তিগত অভিমত যে- বিষয়টা আরো একটু সুন্দর হতে পারতো। আমরা যেভাবে বিদায় নেই; সেভাবেও হতে পারতো। হয়তো অফিসিয়াল জটিলতার কারণে সেটা হয়নি। তারপরও যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে- আমি সে সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি। আজীবন আমি বাংলাদেশ পুলিশকে ভালোবেসে যাবো। শওকত হোসেন বলেন, ‘আমি ২০১০ সাল থেকে মানবিক কাজের সঙ্গে জড়িত। এই পথ চলাটা অনেক দীর্ঘ। এই পথ চলার পরিসর অনেক বড় হয়েছে। আমার পাশে এখন অনেক মানুষ কাজ করে। এই কাজ আমি সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চাই।’
তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে মানুষ আমাদের মানবিক মানুষ হিসেবে জানুক। আমরা এটিই চাই। বাংলাদেশকে মানবিক কান্ট্রি হিসেবে যেন অন্যান্য দেশ শনাক্ত করে- আমাদের ভিশন এটাই। আমরা আমাদের মানবিক বাংলাদেশ নিয়ে থাকতে চাই।
পুলিশে কাজ করা নিয়ে শওকত হোসেন বলেন, আমি নিজেকে বাংলাদেশ পুলিশের একজন গর্বিত সদস্য মনে করি। পুলিশ বাহিনীর মতো একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীতে আমি কাজ করে আসছিলাম দীর্ঘ ১৮ বছর। বর্ণাঢ্য এই জীবনে আমি পুলিশ থেকে অনেক কিছু পেয়েছি। এই জন্য আমি আজীবন কৃতজ্ঞ। যতো দিন বেঁচে থাকব শ্রদ্ধার জায়গা থেকে বাংলাদেশ পুলিশকে স্মরণ করবো।’ পুলিশকে নিয়ে বিতর্ক না ছড়ানোর জন্যও আহ্বান জানান তিনি। গরহাজিরের বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, আমি গরহাজির ছিলাম। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে আমি বসে থাকেনি। আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব ছিলাম। মনবিক কাজে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেছি। আমি তখন ঘুমাই নাই, বিদেশে গিয়ে ঘুরিও নাই।